রাসুলুল্লাহ (সা.) তার উম্মতকে যে ১০টি উপদেশ দিয়েছিলেন

১. তাওবা
তাওবা মানুষকে পাপমুক্ত করে। জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেয়। আল্লাহর রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দেয়। গুনাহের কারণে মানুষের জীবন থেকে উঠে যাওয়া বরকত তাওবার মাধ্যমে ফিরে আসে।
এ কারণে রাসুল (সা.) তার উম্মতকে বেশি বেশি তাওবার পরামর্শ দিতেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে লোক পশ্চিম আকাশে সূর্যোদয় হওয়ার আগে তাওবা করবে আল্লাহ তাআলা তার তাওবা কবুল করবেন। (মুসলিম, হাদিস : ৬৭৫৪)

মহানবি (সা.) তার উম্মতকে সবসময় এমন উপদেশ দিতেন, যা তাদের ইহকাল ও পরকালের জন্য কল্যাণকর। যার মাধ্যমে উম্মত নিজেদের ইহকাল ও পরকালকে সুখময় করে তুলতে পারবে।

২. মা-বাবার অবাধ্য না হওয়া
মা-বাবার অবাধ্য হওয়া যাবে না, যদিও মা-বাবা তোমাকে তোমার পরিবার-পরিজন বা ধনসম্পদ ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাবা-মায়ের সঙ্গে অবাধ্য আচরণকে কবিরা গুনাহ ও হারাম বলে ঘোষণা দিয়েছেন। হজরত আবু বাকারাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের সবচেয়ে বড় গুনাহ (কবিরা গুনাহ) কি তা বলে দেব না? আর তা হলো, ‘আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা, মা-বাবার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা কথা বলা (বুখারি)।’

৩. ফরজ নামাজ ছেড়ে না দেওয়া
যে ব্যক্তি জ্ঞান অন্বেশনে কোনো পথে চলবে, তার জন্য আল্লাহ তাআলা জান্নাতের পথ সহজ করে দেবেন (তিরমিজি, হাদিস : ২৬৪৬)।হজরত মুআজ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে দশটি নসিহত করেন, তার মধ্যে বিশেষ একটি এটাও যে, ‘তুমি ইচ্ছাকৃত ফরজ নামাজ ত্যাগ করো না। কারণ, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ফরজ নামাজ ত্যাগ করল তার ওপর আল্লাহ তাআলার কোনো জিম্মাদারি থাকল না (মুসনাদ আহমাদ ৫/

৪. জ্ঞানার্জন
মহান আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদত করার জন্য। আর ইবাদতের জন্য প্রয়োজন সঠিক জ্ঞানের। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জ্ঞান অন্বেশনে কোনো পথে চলবে, তার জন্য আল্লাহ তাআলা জান্নাতের পথ সহজ করে দেবেন (তিরমিজি, হাদিস : ২৬৪৬)।

৫. ভালো কাজ করা
রাসুল (সা.) তাঁর উম্মতদের ভালো কাজে আত্মনিয়োগের মাধ্যমে বেশি বেশি পুণ্য অর্জনের উৎসাহ দিতেন। এর মাধ্যমে একটি সমাজ যেমন সুন্দর হয়, তেমনি ব্যক্তিও সোনার মানুষে পরিণত হয়। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, প্রতিটি পুণ্যই দান-খয়রাতস্বরূপ। তোমার ভাইয়ের সঙ্গে তোমার হাসিমুখে সাক্ষাৎ এবং তোমার বালতি থেকে তোমার ভাইয়ের পাত্রে একটু পানি ঢেলে দেওয়াও সৎ কাজের অন্তর্ভুক্ত (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৩০৪)।

৬. ঈমানের দাওয়াত দেওয়া

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি সৎপথের দিকে ডাকবে সে তার অনুসারীর সমান সওয়াব পাবে, অথচ অনুসরণকারীর সওয়াব কমানো হবে না। অপরদিকে যে ব্যক্তি ভ্রষ্টতার দিকে ডাকবে সে তার অনুসারীর সমান পাপে জর্জরিত হবে, তার অনুসারীর পাপ মোটেও কমানো হবে না (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬০৯)।

৭. মানুষকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসা
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, আমার মহত্ত্বের কারণে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা স্থাপনকারীরা কোথায়? আজ আমি তাদের আমার বিশেষ ছায়ায় ছায়া প্রদান করব। আজ এমন দিন, যেদিন আমার ছায়া ছাড়া অন্য কোনো ছায়া নেই (মুসলিম, হাদিস : ৬৪৪২)।

৮. রোগীর খোঁজ নেওয়া
আলী (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে আমি বলতে শুনেছি, কোনো মুসলমান যদি অন্য কোনো মুসলিম রোগীকে সকাল বেলা দেখতে যায় তাহলে ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত দোয়া করতে থাকে। সে যদি সন্ধ্যায় তাকে দেখতে যায় তবে ৭০ হাজার ফেরেশতা ভোর পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করতে থাকে এবং জান্নাতে তার জন্য একটি ফলের বাগান তৈরি হয়। (মুসলিম, হাদিস : ৯৬৯)

৯. অন্যের দোষ গোপন রাখা
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, কোনো বান্দা যদি অন্য কোনো লোকের ত্রুটি-বিচ্যুতি দুনিয়াতে আড়াল করে রাখে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার ত্রুটি-বিচ্যুতি আড়াল করে রাখবেন। (মুসলিম, হাদিস : ৬৪৮৯)

১০. সততা
আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা অবশ্যই সততা অবলম্বন করবে। কেননা সততা নেক কাজের দিকে পথ দেখায় এবং নেক কাজ জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়।’ আর কোনো ব্যক্তি সর্বদা সততা বজায় রাখলে এবং সততাকে নিজের স্বভাবে পরিণত করলে, শেষ পর্যন্ত আল্লাহর কাছে তার নাম পরম সত্যবাদী হিসেবে লিপিবদ্ধ হয় (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৮৯)।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top